খবর

চিত্র জগতের ‘মিয়া ভাইয়ের বর্ণাঢ্য জীবন

Featured Image
 
ঢাকাই চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুক। তিনি মিয়া ভাই নামে খ্যাত। নায়ক ফারুক জন্ম গ্রহণ করেন ১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট। মানিকগঞ্জের ঘিওরে জন্ম গ্রহণ করলে ও বেড়ে ওঠেছেন পুরান ঢাকাতে। পুরান ঢাকার অলিতে গলিতে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন শৈশবে। বাবা আজগার হোসেন পাঠানের ছিল পাচ মেয়ে ও দুই ছেলে। ফারুক ছিলেন ভাইদের মধ্যে সবার ছোট ও ডানপিটে। 

নায়ক ফারুক পারিবারিক জীবনেও ছিল সুখি মানুষ। তার প্রিয়তমা স্ত্রী ফারজানা পাঠানকে ভালবেসে বিয়ে করেন। তাদের এই সুখী পরিবারে দুই সন্তান রয়েছে। ছেলে মেয়ে দুজনেই নিজ নিজ জায়গায় প্রতিষ্ঠিত।

১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’তে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রে ফারুকের আত্মপ্রকাশ ঘটে। প্রথম সিনেমায় তার বিপরীতে ছিলেন মিষ্টি মেয়ে কবরী। এরপর ১৯৭৩ সালে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র খান আতাউর রহমানের পরিচালনায় ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ও ১৯৭৪ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতার আলোর মিছিল এ দুটি সিনেমায় পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।

নায়ক ফারুক কাজ করেছেন বাংলাদেশের কিংবদন্তি পরিচালক খান আতাউর রহমান, নারায়ণ ঘোষ মিতা, স্বপন ঘোষ, আজিজুর রহমান, আমজাদ হোসেন সহ আরো গুনী পরিচালকদের সাথে। এইসব গুনী পরিচাকদের হাত ধরেই তিনি উপহার দিয়েছেন অনেক কালজয়ী সিনেমা। যা বাংলার সিনেমা প্রেমিদের মাঝে হিরো ফারুককে চিরস্মরণীয় করে রাখবে। 

১৯৭৫ সালে তার অভিনীত 'সুজন সখী' ও 'লাঠিয়াল' সিনেমা দুটি ব্যাপক ব্যবসা সফল হয়। ওই বছর 'লাঠিয়াল'র জন্য তিনি সেরা-পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। ১৯৭৬ সালে 'সূর্যগ্রহণ' ও 'নয়নমণি', ১৯৭৮ সালে শহীদুল্লাহ কায়সারের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত আব্দুল্লাহ আল মামুনের 'সারেং বৌ', আমজাদ হোসেনের 'গোলাপী এখন ট্রেনে'সহ বেশকিছু সিনেমায় 'মিয়া ভাই'খ্যাত চিত্রনায়ক ফারুকের অভিনয় প্রশংসিত হয়। নায়ক ফারুক চলচ্চিত্রে সামগ্রিক অবদানের জন্য আজীবন সম্মাননা পান ২০১৬ সালে।

ফারুক আপাদমস্তক একজন রাজনীতিবিদ। তিনি চলচ্চিত্র আসার আগেই রাজনীতিতে জড়ান। রাজনীতির মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা ১৭ আসন থেক বিজয়ী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের টকবকে যুবক ফারুক নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে যাপিয়ে পড়েছিলেন এবং দেশকে মুক্ত করেছিলে পাক হানাদার বাহিনী হাত থেকে।

ঢাকাই চলচ্চিত্রের মিয়া ভাই খ্যাত আরেক নক্ষত্র ঝরে গেল আজ। দেশের এই বীরকে জাতি সবসময় স্মরণ রাখবে শ্রদ্ধাভরে। নায়ক ফারুকের কাজ তাকে জাতির কাছে চিরসরণীয় করে রাখবে।