খবর

মৃত্যুর পরেও ব্রিটিশদের হাতে বন্দি যে রাজপুত্র

Featured Image

গল্পের শুরু হয় প্রায় ১৪৫ বছর আগে, যুক্তরাজ্যে মাত্র ১৮ বছর বয়সে মারা যান ইথিওপিয়ার যুবরাজ প্রিন্স আলেমায়েহু। কিন্তু কী পরিস্থিতিতে মৃত্যু হয় যুবরাজের আর কেনই বা তাকে কবর দেওয়া হয় ব্রিটিশ রাজপরিবারের ব্যক্তিগত সমাধিক্ষেত্রে? আজ জানাবো সেই অজানা কাহিনি।

সালটা ছিল ১৮৬২। ইথিওপিয়ার প্রতাপশালী সম্রাট দ্বিতীয় টিওড্রোস তার সাম্রাজ্যের ভিত আরও শক্ত করার প্রয়াসে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে চেয়ে চিঠি লিখেছিলেন রানী ভিক্টোরিয়াকে। কিন্তু তার চিঠির কোনো উত্তর দেননি রানী। এ নীরবতায় ক্রুদ্ধ হয়ে সম্রাট টিওড্রোস ব্রিটিশ রাজপ্রতিনিধিসহ বেশ কয়েকজন ইউরোপিয়ানকে পণবন্দি করেন। 

এর জবাবে সম্রাটের বিরুদ্ধে বিশাল এক সামরিক অভিযান চালায় ব্রিটিশরাজ। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সম্রাটের প্রতিরোধ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় তারা। সম্রাট ব্রিটিশদের হাতে বন্দি হওয়ার বদলে আত্মঘাতী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। যুদ্ধ শেষে, ব্রিটিশ সেনারা সেখান থেকে হাজার হাজার সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন লুটপাট করে এবং  সঙ্গে নিয়ে আসে প্রিন্স আলেমায়েহু এবং তার মা সম্রাজ্ঞী তিরুওয়ার্ক উবেকে। তবে যাত্রাপথে মৃত্যু হয় সম্রাজ্ঞীর।

১৮৬৮ সালে শিশু যুবরাজ ব্রিটেনে পৌঁছানোর পর তার দুর্দশা ও অনাথ অবস্থা দেখে সমবেদনা প্রকাশ করেন রানী ভিক্টোরিয়া। ইথিওপিয়া থেকে ক্যাপ্টেন ট্রিসট্রাম চার্লস সইয়ার স্পিডি নামে, যার সঙ্গে ওই অনাথ বালক ইংল্যান্ডে এসে পৌঁছেছিল, রানী তাকে যুবরাজের অভিভাবক নিযুক্ত করেন।

ক্যাপ্টেন স্পিডি বালক আলেমায়েহুকে নিয়ে বিশ্বের নানা জায়গায় বাস করেন। কিন্তু একসময় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে যুবরাজের আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন। তাকে ফিরিয়ে আনা হয় ব্রিটেনে, ভর্তি করে দেওয়া হয় ব্রিটেনের একটি বেসরকারি স্কুলে। কিন্তু সেখানে যুবরাজের মন বসেনি। পরে তাকে পাঠানো হয় সামরিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়্যাল মিলিটারি কলেজে। কিন্তু সেখানে তার ওপর চলে মানসিক নির্যাতন। ফলে সে বারবার নিজের দেশে ফিরতে চেয়েছে। কিন্তু ব্রিটিশরাজ তার সেই ইচ্ছাকে কোনোভাবেই আমল দেওয়া হয়নি।

তবে যুবরাজকে বাসায় গৃহশিক্ষক রেখে লেখাপড়ার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু যুবরাজ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি চিকিৎসা নিতেও অস্বীকৃতি জানান। তার ধারণা হয়েছিল তাকে বিষপ্রয়োগ করা হয়েছে। এক দশক নির্বাসনে জীবন কাটানোর পর রাজপুত্র আলেমায়েহুর মৃত্যু হয় মাত্র ১৮ বছর বয়সে ১৮৭৯ সালে। পরে রানীর ইচ্ছায় উইন্ডসর রাজপ্রাসাদের চ্যাপেলে তাকে সমাহিত করা হয়।

যুবরাজ আলেমায়েহুর এক বংশধর ফাসিল মিনাস বিবিসিকে বলেছেন, আমরা পরিবারের তরফ থেকে এবং ইথিওপিয়ার জনগণের পক্ষ থেকে তার দেহাবশেষ ফেরত চাই, কারণ ইংল্যান্ড তো তার জন্মস্থান নয়! তাই যুক্তরাজ্যে তাকে কবর দেওয়া সঠিক ছিল না। কিন্তু বাকিংহাম প্রাসাদের একজন মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বিবিসিকে জানিয়েছেন, উইন্ডসর প্রাসাদের সেন্ট জর্জেস চ্যাপেল থেকে তার মৃতদেহ খুঁড়ে তোলা যাবে না। তাতে কবরস্থ অন্য মৃতদেহগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে অনেকেই বলেছেন, বিষয়টি অনেকটা একজন মৃত যুবরাজকে বন্দি করে রাখার মতোই ঘটনা। ব্রিটিশ রাজপরিবারের অহংকারের কাছে বন্দি আফ্রিকার যুবরাজ!