খবর

জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছে বাংলাদেশ

Featured Image

নিউজ ডেস্ক :

সাকিব আল হাসান আবেদন তখনও পুরোপুরি শেষ করেননি। তার সঙ্গে পুরো গ্যালারিই করছিল চিৎকার। এক মুহূর্ত দেরি না করেই সাকিব ইঙ্গিত দিলেন রিভিউ নেওয়ার । পরে অবশ্য আউট হয়নি সেটি। কিন্তু দৃশ্যটি ছিল ভারতের ইনিংসের প্রথম বলের। ১৪৫ রানের লক্ষ্য দিয়ে বল হাতে যে বাংলাদেশ ছেড়ে কথা বলবে না, বোঝা গিয়েছিল তা। প্রথম বল থেকে উজ্জ্বীবিত থাকা বাংলাদেশ একই রকম থাকলো মিরপুর টেস্টের তৃতীয় দিনে যতক্ষণ বল করলো।

বেশির ভাগ বলেই এলো আবেদন। তাতে বিভ্রান্ত হলেন আম্পায়ারও। বিরাট কোহলির স্পষ্ট ব্যাটে লাগা বলে আউটও দিয়ে দিয়েছিলেন, পরে অবশ্য তিনি বাঁচেন রিভিউ নিয়ে।


ভারতও ভয়ে আছে বোঝা যাচ্ছে তাদের শরীরি ভাষায়। আউট হওয়ার পরই যেমন কোহলি তেড়ে এসেছিলেন তাইজুল ইসলামের দিকে। দুয়েকটা কথা কাটাকাটি যে হয়েছে, তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সব ছাপিয়ে দিনের শেষে বাংলাদেশকে জয়ের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছেন বোলাররা। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয়টিতে মুখোমুখি হয়েছে

রান করেছে ভারত, এখনও জয়ের জন্য তাদের দরকার ১০০ রান। এর আগে দুই ইনিংসে ২২৭ ও ২৩১ রান করে বাংলাদেশ। সফরকারীরা তাদের প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়েছে ৩১৪ রানে।

ভারত ১৪৫ রানে খেলতে নামার পর শুভমন গিলের পায়ে লাগলে প্রথম বলেই এলবিডব্লিউয়ের আবেদন করেন সাকিব। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে নেন ব্রিভিউও। কিন্তু উইকেটের দেখা পাননি।

পরে ইনিংসের তৃতীয় ওভারে এসে বাংলাদেশকে উইকেট এনে দেন সাকিব আল হাসান। তার টার্ন করা বল রাহুলের ব্যাটের কানায় লাগে, উইকেটের পেছনে দুর্দান্তভাবে বল তালুবন্দী করেন নুরুল হাসান সোহান । ৭ বলে ২ রান করে ফেরেন ভারতীয় অধিনায়ক।


দ্বিতীয় উইকেটের জন্যও বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি বাংলাদেশকে । এবার চেতেশ্বর পূজারাকে ফেরান মেহেদী হাসান মিরাজ।

অষ্টম ওভারের প্রথম বলে এগিয়ে আসেন পূজারা। তিনি ফাঁদে পড়েন স্টাম্পিংয়ের। ব্যাট মাটিতে পড়ার আগেই স্টাম্প ভাঙেন নুরল হাসান সোহান। ১২ বলে ৬ রান করে আউট হন পূজারা। সেখানেই থামেনি বাংলাদেশ। নিজেদের চাঙা ভাব ধরে রাখে। ফেরায় আরেক উদ্বোধনী ব্যাটার শুভমন গিলকেও । এবারও মিরাজের বলে স্টাম্পিং করেন সোহান। ৩৫ বলে ৭ রান করে আউট হন ভারতীয় ব্যাটার।


স্বপ্নটাকে এরপর আরও বড় করেন মিরাজই। এবার তার বলে শর্ট লেগে দাঁড়িয়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ ধরেন মুমিনুল হক, আউট হন কোহলি। ২২ বলে ১ রান করে ফেরার সময় স্পিনার তাইজুল ইসলামের সঙ্গে বিবাদে জড়ান কোহলি। পরে সাকিব ও আম্পায়াররা তাকে ঠাণ্ডা করে ড্রেসিং রুমে ফেরান।


দিনের বাকি সময়ে উইকেট না গেলেও বাংলাদেশ দিন শেষ করেছে বড় স্বপ্ন নিয়ে। উইকেটে টার্ন আছে, হঠাৎ বাউন্সও করছে, স্পিনাররা পাচ্ছেন বাড়তি সুবিধা। এমন চললে ভারতের জন্য সহজ হবে না লক্ষ্যে পৌঁছানো। তাদের হয়ে ক্রিজে থাকা জয়দেব উনাদকাট ৮ বলে ৩ ও অক্ষর প্যাটেল ৫৪ বলে করেছেন ২৬ রান।

এর আগে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৭ রান নিয়ে দিন শুরু করে বাংলাদেশ। মোহাম্মদ সিরাজের করা দ্বিতীয় বলেই বাউন্ডারি হাঁকান জাকির হাসান। পরের ওভার করতে আসেন রবীচন্দ্রন অশ্বিন। তার করা পঞ্চম বলে এলবডিব্লিউয়ের জোরালো আবেদন হয়, আম্পায়ার অবশ্য তাতে সাড়া দেননি।

রিভিউ নিয়েও ব্যর্থ হয় ভারত, উইকেট ছিল মিসিং। ঠিক তার পরের বল আবারও শান্তর প্যাডে লাগে। এই দফায় আর বাঁচতে পারেননি তিনি। এবার অবশ্য রিভিউ নেন শান্ত, কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। ৩১ বলে ৫ রান করে সাজঘরে ফেরত গেছেন এই উদ্বোধনী ব্যাটার। তার কিছুক্ষণ পরই মুমি নুল হকও আউট হন। মোহাম্মদ সিরাজের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি। ১ চারে ৯ বলে ৫ রান আসে তার ব্যাট থেকে। ৩৬ বল ক্রিজে থেকে ১৩ রান করা সাকিব আল হাসান আউট হয়েছেন সাদামাটাভাবে। জয়দেব উনাদকাটের বলে এক্সট্রা কাতার অঞ্চলে সহজ ক্যাচ দেন তিনি শুভমন গিলের হাতে।


অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমের রান খরা কাটেনি ভারতের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টেও। ১৯ বলে ৯ রান করে অক্ষর প্যাটেলের বলে এলবিডব্লিউ হয়েছেন তিনি। বাকিদের আসা-যাওয়ার মিছিলে অবশ্য ব্যতিক্রম জাকির হাসান। এই ব্যাটারের শট সিলেকশন, বল ছাড়া ও শট খেলার ধরন ছিল দারুণ। হাফ সেঞ্চুরিও পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এরপরই উমেশ যাদবের বলে ডি থার্ডম্যান দিয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন। ৫ চারে ১৩৫ বলে ৫১ রান করেন জাকির। ৫ বলে ০ রান করে সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন মেহেদী হাসান মিরাজ। এরপর ক্রিজে আসেন নুরল হাসান সোহান। গ-াভস হাতে তার সময় ভালো যাচ্ছে না, রান নেই ব্যাটেও। তিনি শুরুও এদিন করেছিলেন বেশ ভালো। কিন্তু ধরে রাখতে পারেননি বেশিক্ষণ। এগিয়ে এসে অক্ষর প্যাটেলের টার্নে পরাস্ত হয়ে স্টাম্পিংয়ের শিকার হন এই ব্যাটার। ২ চার ১ ছক্কায় ২৯ বলে ৩১ রান করেন তিনি।

এরপর থেকে দলকে টেনেছেন লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজ। লিটন পেয়েছেন হাফ সেঞ্চুরিও। যদিও স্লিপে বিরাট কোহলির কাছে দুবার জীবন পেয়েছেন তিনি । চা বিরতি থেকে ফিরেও ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন লিটন-তাসকিন। কিন্তু সিরাজের বলে শেষ হয়ে যায় সবকিছু। তার বল বুঝতেই পারেননি লিটন, সরাসরি লাগে স্টাম্পে। ৭ চারে ৯৮ বলে ৭৩ রান করেন তিনি। তার বিদায়ের পর অলআউট হওয়া ছিল কেবল অপেক্ষার ব্যাপার। তাসকিন আহমেদ সেটি বাড়িয়েছেন কেবল। ৪৬ বলে ৩১ রান করে শেষ অবধি অপরাজিত থেকেছেন তিনি।