খবর

ব্রিটিশ রাজপরিবারের টিকে থাকার রহস্য

Featured Image

ব্রিটিশ রাজপরিবারের ক্ষমতা মূলত রাজা থেকে রাজার সন্তানের কাছে বর্তায়। অর্থাৎ কোনো রাজা বা রানি যদি মারা যান, তাহলে তার সন্তানের মধ্যে যিনি বড় তিনি ক্ষমতায় বসবেন। রাজা ষষ্ঠ জর্জের মৃত্যুর পর তার মেয়ে দ্বিতীয় এলিজাবেথ সিংহাসনে বসেন। এর আগে রাজা ষষ্ঠ জর্জ তার বাবা পঞ্চম জর্জের পর রাজা হন। এর আগে সিংহাসনে ছিলেন রাজা পঞ্চম জর্জের মা রানী ভিক্টোরিয়া।

বাবা-মায়ের ছেলে সন্তান না থাকায় রানী ভিক্টোরিয়া ও দ্বিতীয় এলিজাবেথ সিংহাসনে বসতে পেরেছেন। কারণ পূর্বে রাজপরিবারের নিয়মানুসারে, উত্তরসূরীদের মধ্যে যদি ছেলে-সন্তান থাকে এবং সে যদি বয়সে মেয়েদের চেয়ে ছোটও হয়, এরপর তিনিই সিংহাসনে বসবেন!

কিন্তু ২০১৫ সালে প্রিন্স উইলিয়ামের মেয়ে প্রিন্সেস শার্লোটের জন্মের পর এই আইনের পরিবর্তন করা হয়েছে। এর ফলে প্রিন্সেস শার্লোট তার ভাই প্রিন্স লুইসের আগে সিংহাসনে বসতে পারবেন, যদি তার তেমন সুযোগ হয়।
বর্তমানে ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারীদের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে রয়েছে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের বড় ছেলে এবং প্রিন্স উইলিয়ামের বাবা প্রিন্স চার্লস। তার পরেই সিংহাসনে বসতে পারবেন প্রিন্স উইলিয়াম। প্রিন্স উইলিয়ামের পরে সিংহাসনের দাবিদার তার ছেলে প্রিন্স জর্জ, প্রিন্সেস শার্লোট এবং প্রিন্স লুইস। সেই হিসেবে প্রিন্স হ্যারির ব্রিটিশ সিংহাসনে বসার কোনো সম্ভাবনা নেই।

ব্রিটিশ রাজপরিবারকে নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। যেমন- রাজপরিবারের কোনো সদস্য সেনাবাহিনীতে যোগদান করলে তারা সরাসরি বড় কর্মকর্তার মর্যাদা লাভ করেন, যা সাধারণ সৈনিকদের অনেক সময় ক্ষুব্ধ করে। এছাড়া যারা রাজপরিবারের ব্যয়বহন করার জন্য কর প্রদান করছেন, তাদের জন্য ব্রিটেনের রানী বা রাজা তেমন কিছু করছেন বলে মনে করা হয় না।

এর বাইরে আধুনিক বিশ্বে রাজপরিবার থাকার যৌক্তিকতাও খুঁজে পান না অনেকে। যেহেতু তাদের রাষ্ট্র পরিচালনা করার কোনো ক্ষমতা নেই, এরপরও তাদের পেছনে কেন এত বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করা হবে- তা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন। 

কিন্তু এত সব প্রশ্নের মাঝেও ব্রিটিশ রাজপরিবারের টিকে থাকার পেছনে কারণ হলো তাদের খোলামেলা ও নমনীয় আচরণ এবং সিংহাসনে বসা নিয়ে কোনো গোলযোগ না থাকা। পাশাপাশি ব্রিটিশ রাজপরিবার সবসময়ই গণতন্ত্রকে সমর্থন করে আসছে। অন্যদিকে তাদের একসময়ের প্রতিদ্বন্দ্বী ফরাসি রাজপরিবার ১৭৯০ সালেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কারণ তারা সমাজের কঠোর ও অত্যাচারী অভিজাত শ্রেণীর সাথে জোট বেঁধেছিল, যা সাধারণ মানুষ পছন্দ করেননি।

ব্রিটিশ রাজপরিবারের টিকে থাকার পেছনে আরেকটি কারণ হলো তারা সব শ্রেণির মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে। তারা যেমন ব্যবসায়ীদের সহায়তা করে থাকে, তেমনি বিজ্ঞানের উৎকর্ষতার জন্য কাজ করে থাকে। পাশাপাশি প্রভাবশালী পরিবার হিসেবে জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে রাজনীতি থেকে নিজেদের সরিয়ে রেখেছে।