খবর

দফায় দফায় অভিযানেও দেশে কমছে না অনুমোদনহীন চিকিৎসা

Featured Image

নিউজ ডেস্ক :

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দেশজুড়ে অনুমোদনহীন চিকিৎসা কেন্দ্র বন্ধে অভিযান চালালেও ওসব প্রতিষ্ঠানের দৌরাত্ম্য কমছে না। আর ওসব প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা নিতে এসে জীবন-মরণ সঙ্কটে পড়ছে রোগীরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হুঁশিয়ারি-অভিযান সত্ত্বেও অনুমোদনহীন ওসব চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান কিভাবে চলছে তা প্রশ্নবিদ্ধ। রাজধানীসহ দেশজুড়ে হাজার হাজার বেসরকারি হাসপাতাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদনের তোয়াক্কা না করেই চিকিৎসা নামে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই পর্যাপ্ত দক্ষ চিকিৎসক এবং উন্নতমানের চিকিৎসা যন্ত্রপাতি। অথচ ওসব হাসপাতালেই গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রোপচার করা হয়। আর তার খেসারত দিতে রোগীর প্রাণ হারাতে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত ২৬ মে দেশজুড়ে নিবন্ধনবিহীন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনিস্টক সেন্টার বন্ধে অভিযান শুরু করে। ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে ৩ দিনে দেশজুড়ে ৫৩৮টি অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করা হয়। তার মধ্যে ১৬৪টি রাজধানীতেই রয়েছে।

গত ২৯ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া দ্বিতীয় ধাপের অভিযানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ৮৫০টি অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংক বন্ধ করে। তার মধ্যে বন্ধ হওয়া হাসপাতালগুলোর মধ্যে ২০টি রাজধানীতে রয়েছে। ওসব অভিযানেও বন্ধ হচ্ছে না চিকিৎসার নামে বাণিজ্য। বরং অব্যাহতভাবেই অনুমোদনহীন বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের দৌরাত্ম্য বাড়ছেই।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সূত্র জানায়, দেশজুড়ে মোট ১৩ হাজার ৬১১টি নিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে। আরো ২২ হাজার ৪৭২টি লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করেছে। তাছাড়া নতুন করে হাসপাতাল তৈরির জন্য ১৮ হাজার ৬৮৫টির আবেদন রয়েছে। একসময় তো দেশে মাত্র কয়েকশ' বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ছিল। এখন ছোট-বড় হিসাব করলে অর্ধলাখ হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার বিদ্যমান লোকবল দিয়ে দেশের বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ক্লিনিকের এত বড় সেক্টর সামলানো সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, অনুমোদনহীন বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো মানুষের জীবন নিয়ে বাণিজ্য করছে। ওসব অবৈধ-অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান দেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। অনুমোদন না নিয়েই অনেক প্রতিষ্ঠান অপারেশন থিয়েটার থেকে আইসিইউ সেবা পর্যন্ত দিচ্ছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সব জায়গায়। অনুমোদন ছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক চালু করার শাস্তি দীর্ঘমেয়াদি কারাবরণ হতে হবে। যাতে দু'-চার বছর জেল খেটেই বেরিয়ে আসতে না পারে।

সারাদেশে স্বাস্থ্য খাতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা ও তদারকির জন্য প্রচুর লোকবল দরকার। তার সঙ্গে প্রয়োজন যুযোপযোগী আইন । দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আলাদা একটি অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। আর আইনে সর্বোচ্চ ক্ষমতা অধিদপ্তরকে দেয়া যেতে পারে। দেশের স্বাস্থ্য খাতে শৃঙ্খলা আনতে আইন সংশোধন, সক্ষমতা বৃদ্ধি আর প্রচুর অর্থ বরাদ্দ দরকার। কারণ, শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশে ওই অধিদপ্তরকে চষে বেড়াতে হবে। সেজন্য ভালো গাইড লাইন তৈরি করা জরুরি। পরিকল্পনা মাফিক কাজ না করলে কোনো সমাধান নেই। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) আহমেদুল কবীর জানান, চিকিৎসার নামে প্রতারণা বন্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নানা ধরনের উদ্যোগ চলমান। এখনো অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অনিবন্ধিত ও অনিয়মের দায়ে দণ্ডিত প্রতিষ্ঠানগুলো আবার যাতে গড়ে না ওঠে সেজন্য অভিযান চলমান রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই ধারা চলতে থাকবে।